মরা জানবো পৌষ সংক্রান্তি মকর সংক্রান্তির কিছু অজানা তথ্যের এর সম্বন্ধে। পৌষ সংক্রান্তি মকর সংক্রান্তি, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের আর এক পার্বন হল পৌষ সংক্রান্তি যা আবার পৌষ পার্বণ নামেও পরিচিত। পৌষ মাসের শেষ দিনটি পৌষ সংক্রান্তি। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। মূলত জ্যোতিষ শাস্ত্রে মকর সংক্রান্তি শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশ কে বোঝানো হয়ে থাকে। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী সংক্রান্তি একটি সংস্কৃত শব্দ এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। 12টি রাশি অনুযায়ী এরকম সর্ব মোট 12 টি সংক্রান্তি আছে। মকর সংক্রান্তি ভারতীয় সংস্কৃতিতে উত্তরায়নের সূচনা হিসেবে পরিচিত একে অশুভ সময় শেষ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। এদিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে তার মধ্যে পিঠে খাওয়া, ঘুড়ি ওড়ানো অন্যতম।


সারাদিন ঘুড়ি ওড়ানোর পরে সন্ধ্যায় পটকা ফুটিয়ে ফানুস উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি করা হয়। বহু কাল ধরে এই দিনটি কৃষিজীবী বাঙালির বড় আনন্দের নতুন ধানের উৎসব। প্রাচীন হিন্দুরা আগে এই দিনটিতে পরলোকগত পূর্বপুরুষ, বাস্তু দেবতার উদ্দেশ্যে পিঠা-পায়েস নিবেদন করতেন। এর ঠিক আগের দিন গ্রামবাংলার গৃহস্থ বাড়ির উঠোন পরিষ্কার করে নিকিয়ে, সেখানে চাল গুড়ি দিয়ে চমৎকার সব আলপনা দেওয়া হতো। যার মধ্যে কুল, সপ্তডিঙ্গা, মধুকর, লক্ষীর পা, পেঁচা এবং অবশ্যই ধানের ছড়ার অল্পনা বেশি প্রচলিত ছিল। মা লক্ষী ঘরে আসবেন বলেই হয়তো করা হতো এত তোড়জোড়। এ বাংলায় এই আচারটিকে  লোকায়ত ভাষায় 'আউনি বাউনি' পুজো বলে। আউনি বাউনি বা আগল্বা পূজা বলে। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পালিত একটি শস্য উৎসব। এই উৎসব ক্ষেতের পাকা ধান প্রথম ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষক পরিবারে পালনীয় অনুষ্ঠান বিশেষ। 

 

 আরও পড়ুন: গঙ্গা সাগর মেলা কিভাবে চালু হল ? এর মাহার্ত কি ? কেন গঙ্গাকে পুজো করা হয় ?

হেমন্তকালে আমন ধান ঘরে প্রথম তোলার প্রতীক হিসেবে কয়েকটি পাকা ধানের শীষ ঘরে এনে কিছু নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে পৌষ সংক্রান্তির দিন দুই তিনটি ধানের শীষ বিনুনী করে আওনি বাউনি তৈরি করা হয় শীষের অভাবে দু তিনটে খড় একত্রে লম্বা করে পাকিয়ে তার সঙ্গে ধানের শীষ মূলর ফুল, সর্ষেফুল, আমপাতা ইত্যাদি গেথে আওনি বাউনি তৈরি করারো রেওয়াজ রয়েছে। বাউনিবাঁধর আগে মাটির সরায় পিঠে ভাজতে হয়। পিঠে ভাজা শেষ হলে, তা সেই সরার উপর রেখে তার ওপর মাটির তৈরি ঢাকনা চাপা দিয়ে সেই ঢাকনার ছোট্ট গোল মাটির হাতল কে বের করে দিয়ে প্রথম বাউনিটি বেঁধে দিতে হয়। তারপর তা বাধা হয় বাড়ির অন্যান্য জায়গায়।

 

এটি বাধা হয় বাড়ির দরজার কড়া, গোলাঘরের আংটায়, ঢেঁকির খুঁটিতে, তরঙ্গের চাবি কব্জায় কিংবা সিন্দুকের হাতলে, ধানের গোলা, বাক্স-পেটরা, তরঙ্গ ইত্যাদির ওপর এবং খড়ের চালে গুঁজে দেওয়া হয়। বছরের প্রথম ফসলকে অতি পবিত্র ও সৌভাগ্য দায়ক মনে করে একটি পবিত্র ঘটে সারা বছর ধরে সংরক্ষণ করা হয়। এই আচারটিকেই আউনি বাউনি বলা হয়। যেহেতু উৎসবটির শীতের মাঝামাঝি সময়ে উদযাপিত হয় শীতকালে হল খেজুর গাছ থেকে টাটকা রস নামিয়ে নবীন খেজুর-গুড়-তৈরি সময়। তাই পৌষ পার্বণের পিঠেপুলি নতুন অবশ্যম্ভাবী। পৌষ সংক্রান্তি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিনে হলেও পিঠে তৈরীর ধূম চলে তার আগের দিন থেকে শুরু করে পয়লা মাঘ পর্যন্ত। মানে মোট তিন দিন। এই সময় পাতলা রুটির মতো পাটিসাপটা, পটলের মত আকারের চিনি নারকেলের পাক দেওয়া পুর ভরা ভাজা পুলি, ঘন দুধে ভেজানো দুধপুলি ও ভেতরের পুর ভরা ক্ষীরপুলি, নারকেলকোরা ও চিনির পুর দেওয়া মুগ ডালের সঙ্গে চাল গুঁড়ো মিশিয়ে বানানো অনবদ্য মূগপুলি। একই ভাবে রাঙা সেদ্ধ করে চাল গুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে বানানো রাঙা আলুর পুলি।

 


পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি পার্বণ মানেই পিঠা-পুলির উৎসব। পৌষ সংক্রান্তির দিন বাঙালিরা সারাদিনব্যাপী ঘুড়ি ওড়ায়। এই দিন ঘুঁড়ি উড়ানোর জন্য তারা আগে থেকে ঘুড়ি বানিয়ে এবং সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে প্রস্তুতি নেয়। মানুষ সূর্য দেবতার কাছে নিজেদের ইচ্ছা বা আকুতিকে সুন্দর সুন্দর ঘুড়ির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পালন করে ঘুড়ি উৎসব। 



মুলত প্রিয় দেবতার কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি রূপক বা প্রতীক হিসেবে কাজ করে। গ্রামগঞ্জে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হয় ভারতের বীরভূমের কেন্দুলী গ্রামে এই দিনটিকে ঘিরে ঐতিহ্যময় জয়দেব মেলা হয়, বাউল গান এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। এই দিনে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার অন্তর্গত সাগরদ্বীপে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কপিলমুনির আশ্রম কে কেন্দ্র করে পূর্ণস্নান এবং বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সহস্রাধিক পূর্ণার্থী ও অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত দর্শনার্থীদের সমাগম হয় এই মেলায় পৌষ সংক্রান্তি মকর সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতেও এই দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। তাই সামাজিক ও ভৌগলিক গুরুত্ব ছাড়াও এই দিনটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। 

আরও পড়ুন:ছট পূজোর ইতিহাস কি জানেন, কেন করা হয় ছট পূজা?

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন